My Online Diary

Online Journal, Travel Log and Memoirs

আমার বাল্যকথা


Satyendranath Tagore (সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর) (1842–1923)

আমার বাল্যকথা

সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা

রবীন্দ্রনাথের ‘জীবনস্মৃতির’ (১৯১২) সমীপসময়ে আরও একটি স্মৃতিকথা লেখা হয় ‘ভারতী’ পত্রিকায়। সতেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার বাল্যকথা’। ‘আমার বাল্যকথা ও বোম্বাইপ্রবাস সমস্তটাই ভারতী পত্রিকায় প্রায় দুই বৎসর ধরিয়া ক্রমান্বয়ে বাহির হইয়াছে, এইক্ষণে এই দুই খন্ড একত্রে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হইল।’ –দুটি বইকে একত্রে গ্রন্থিত করেছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ ১৯১৫-তে। স্মরণযোগ্য ‘সবুজপত্রে’র প্রকাশকাল ১৯১৪।

রবীন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি সাধুভাষায় লেখা, সত্যেন্দ্রনাথের চলিতে। চলিত ভাষা আন্দোলনের প্রস্তুতিপর্বের বই ‘আমার বাল্যকথা’। এক দিকে সাধুভাষার স্থির সাহিত্যিক আদর্শ অন্যদিকে চলিত ভাষার পরীক্ষা-নিরীক্ষা-একজন লেখক কোনটিকে বেছে নেবেন? এ সময়ের এই দোলাচলতা সত্যেন্দ্রনাথকেও স্পর্শ করেছে। তাঁর বক্তব্যঃ ‘এই গ্রন্থে সাধু ও চলিত ভাষা এ উভয়েরই সংমিশ্রণ দৃষ্ট হইবে। চলিত ভাষার ব্যবহার বিষয়ে নানা মুনির নানা মত। কোন কোন পন্ডিত সাহিত্যক্ষেত্রে কথিত ভাষার  ব্যবহার নানা কারণে দুষ্ঠ বিবেচনা করেন, আবার ‘বীরবল’ প্রমুখ অপর একদল সাহিত্যিক আছেন যাঁহারা ঐ ভাষা প্রবর্তনের পক্ষপাতী। আমি প্রয়োজন মত এই দুই প্রকার ভাষার উপযোগ করিয়া উভয় পক্ষেরই মনোরক্ষা করিতে সচেষ্ট হইয়াছি। আমার মনে হয় বিষয়ের তারতম্য অনুসারে ভাষারও তারতম্য আবশ্যক হইয়া পড়ে।’ সত্যেন্দ্রনাথ কথিত ‘দুই প্রকার ভাষার উপযোগ’ অবশ্য পরবর্তী সময়ে গৃহীত হয়নি। তাঁর নিজের কলমেও চলিতের পক্ষপাতটাই বেশী। ‘আমার বাল্যকথা’য় সাধু ও চলিত ক্রিয়ার মিশ্রণের অনুপাত লক্ষ্য করলে সেটা বোঝা যায়। বাক্যরীতির দিক থেকে, বলাবাহুল্য, বইটিতে আগাগোড়া চলিত ভাষার সচলতা।

বাংলা বাক্যের স্বাভাবিক গড়ন-কর্তা-কর্ম-ক্রিয়া। ধীরগামী সাধুভাষার গদ্যে এই ক্রম মান্য। কিন্তু যে মুহুর্তে চলিতের ক্রিয়ারুপ ব্যবহার করা হল, বাক্যরচনাও সম্মুখীন হল এক নতুন সমস্যার। চারটি স্বরধ্বনি যেখানে চারটি ব্যঞ্জনকে বহন করে (যেমন, করিতেছি-র ক্ষেত্রে) তার পদক্ষেপ একরকম, আর তিনটি ব্যঞ্জনের প্রবহণ যখন দুটি স্বরের ওপর (যেমন, করছি) তখনকার পদক্ষেপ ভিন্ন রকম। ধীরতার বদলে হসন্তসংঘাতে জেগে ওঠে চঞ্চলতা। আর তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে লেখককে পুরো বাক্য কাঠামো নিয়ে নতুন করে ভাবতে হয়। কোথাও বাক্যকে দিতে হয় হ্রস্ব আয়তন, কোথাও ক্রিয়া-বিহীনতা, কোথাও বা বিপ্রতীপ ক্রম। সত্যেন্দ্রনাথ যে চলিত গদ্যের একজন সচেতন শিল্পী ছিলেন, বাল্যকথার বাক্যগড়নে তার প্রমাণ আছে। এখানে ক্রিয়াহীন হ্রস্ব বাক্যের কয়েকটি দৃষ্টান্ত উদ্ধার করিঃ

১. সেকাল আর একাল-কি তফাৎ!

২. বড়দাদা আর আমি মার কাছে ভয়ে জড়সড় ।

৩. পাড়াগেঁয়ে ছেলের উপর তার ভারি আক্রোশ ।

৪. সেই আমাদের শিক্ষালয়, সেই বিশ্রামস্থান ।

ক্রিয়ার স্থানবদলের দৃষ্টান্তঃ

১. আমাদের আসল আড্ডা ছিল মেজ কাকিমার ঘর।

২. সেই ঘটনা হচ্ছে কেশবচন্দ্রের সঙ্গে মিলন।

৩. আর এক ছিলেন রাজা কালিকুমার।

‘আত্মজীবনী লেখার উদ্দেশ্যই ঘরের কথা পরকে বলা।’ সত্যেন্দ্রনাথের ক্রিয়াপদে সেই ঘরোয়া ভঙ্গীঃ আওড়াতুম/দিতুম/হাতে দিলে/ছাড়তুম না ইত্যাদি।

বইটি ভিন্ন কারণেও মূল্যবান। পাঠক এখানে পাবেন ঠাকুর বাড়ির অন্তরঙ্গ ছবি। মহর্ষির দ্বিতীয় পুত্র প্রথম ভারতীয় আই .সি.এস. সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন ঘোর Radical। পর্দা প্রথার অবসানে তিনি ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ দেশের মেয়েদের ‘খর্বীকৃত জীবনের’ আচলায়তন ভাঙতে চেয়েছিলেন তিনি। প্রসঙ্গত একটি দৃষ্টান্ত উদ্ধৃত করিঃ

‘আমি প্রথমবার বোম্বাই থেকে বাড়ী এসে আমার স্ত্রীকে গভর্ণমেন্ট হাউসে নিয়ে গিয়েছিলুম। সে এক মহা ব্যাপার। শত শত ইংরেজ মহিলার মাঝখানে-সেখানে একটি মাত্র বঙ্গবালা-তখন প্রসন্নকুমার ঠাকুর জীবিত ছিলেন। তিনি তো ঘরের বৌকে প্রকাশ্যস্থলে দেখে রাগে লজ্জায় সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে গেলেন।’

স্ত্রী-কে বোম্বাই নিয়ে যেতে হবে জাহাজে। তখন কলকাতা আর বোম্বাইয়ের মধ্যে রেলপথ তৈরী হয়নি। বাড়ি থেকেই গাড়িতে উঠলে সুবিধা হয়। ‘কিন্তু বাবা মহাশয় তাতে সম্মত হলেন না- বল্লেন মেয়েদের পালকি করে যাবার নিয়ম আছে তাই রক্ষা হোক।’ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দেবেন্দ্রনাথ যে কিছুটা Conservative হয়ে পড়েছিলেন, সত্যেন্দ্রনাথ আকপটে সে কথা বলেছেন।

বিলেতে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ম্যাক্সমূলর ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথের সংস্কৃতের পরীক্ষক। সত্যেন্দ্রনাথ তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। এই সূত্রে তাঁর ‘স্বপ্নরাজ্যের সুন্দরী’ ভারতবর্ষের কথা বলেছেন ম্যাক্সমূলর। এ বইয়ের এক উজ্জল অংশ দ্বারকানাথ ও ম্যাক্সমূলর সম্বদ্ধে কথোপকথন। ‘Oh!Ihave smoked many a Hookah with your grandfather in Paris!’-কৌতূহলোদ্দীক এ খবরটি জানিয়েছেন ম্যাক্সমূলর।

পিতা দেবেন্দ্রনাথ, কাকা গিরীন্দ্রনাথ, ছোট কাকা নগেন্দ্রনাথ, বড় দাদা দ্বিজেন্দ্রনাথ-প্রত্যেকের চিত্রণ অন্তরঙ্গ ও সজীব। তা ছাড়া ঠাকুর বাড়ির প্রসারিত আঙিনায় আছেন মনোমোহন ঘোষ, নবগোপাল মিত্রের মতো সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। ‘স্বদেশী মেলা’র প্রাণপুরুষ ছিলেন নবগোপাল মিত্র। এই মেলা উপলক্ষেই সত্যেন্দ্রনাথ রচনা করেন ভারতসঙ্গীত-‘মিলে সব ভারতসন্তান/এক তান এক প্রাণ/গাও ভারতের যশোগান।’ ডিরোজিও-র To India-My Native Land যদি প্রথম ভারতসঙ্গীত হয়, সত্যেন্দ্রনাথের ভারতসঙ্গীতের স্থান তার পরেই। এই সঙ্গীত বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বন্দেমাতারম’-এর পুরোগামী।

গানটি সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্র চৈত্র ১২৭৯- এর বঙ্গদর্শনে লেখেন, ‘সত্যেন্দ্রবাবু আর কিছু লিখুন আর নাই লিখুন এই গানটিতে তিনি বাংলা সাহিত্যে অমর হইয়া থাকিবেন। এই মহাগীত ভারতের সর্বত্র গীত হউক। হিমালয় কন্দরে প্রতিধ্বনিত হউক। গঙ্গা যমুনা সিন্ধু গোদাবরী বৃক্ষে বৃক্ষে মর্মরিত হউক। পূর্ব পশ্চিম সাগরের গম্ভীর গর্জনে মন্দ্রীভূত হউক। এই বিংশতি কোটি ভারতবাসীর হৃদয়যন্ত্র ইহার সঙ্গে বাজিতে থাকুক।’

আশা করি রবীন্দ্রনাথের ১২৫-তম জন্মবর্ষে বইটি পুনর্মুদ্রন রবীন্দ্র অনুরাগী পাঠক সমাজে সমাদৃত হবে।

রমাপ্রসাদ দে




Last 10 Posts

Bangladesh
Posted by: Touhid Uz Zaman
  Read More
This is my first memoirs
Posted by:
  Read More
This my Second Memoirs
Posted by:
  Read More
My Memoiars
Posted by:
  Read More

More