My Online Diary

Online Journal, Travel Log and Memoirs

পিছু ফিরে দেখা


Sayed Haider (ডা. সাঈদ হায়দার)

পিছু ফিরে দেখা

ডা. সাঈদ হায়দার

লেখকের কথা

বিংশ শতাব্দীর প্রথম চতুর্থাংশের শেষপ্রান্তে আমার জন্ম। এ ছিল এমন একটা সময় যখন ব্রিটিশ বিরোধী স্বরাজ আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং স্বদেশী বিপ্লবীদের কর্মকান্ড শ্বেতকায় শাসকদের বিব্রত করে তুলেছে। তারপর পেরিয়ে এলাম এই এতটা বছরের যে জীবন – তাকে স্পর্শ করেছে বঙ্গদেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ সময় ও ঘটনা। বিদেশি পণ্য বর্জনের ডাক শুনেছি শৈশবে, মুসলিম রেনেসাঁর আাঁচ অনুভব করেছি বাল্যকালে, কৈশোরে স্কুল পেরোবার আগেই শুরু হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যার ক্ষণে আমি কলকাতা মেডিকেল কলেজের ছাত্র। আর পৃথিবীব্যাপী যুদ্ধের সেই সংশয়াকুল প্রেক্ষাপটে প্রত্যক্ষ করেছি মানবতার চরম অবমাননকর তেতাল্লিশের মন্বন্তর, আর রোমাঞ্চিত হয়েছি ‘ভারত ছাড় ডাক’ শুনে, আর পাকিস্তান আন্দোলনে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। যুদ্ধোত্তর কালের নানা দ্বন্দ্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংঘর্ষ আর সংলাপ শেষে স্বাধীনতা লাভ এবং পাকিস্তানের সৃষ্টিতে যেমন উল্লসিত হয়েছি, তেমনি কলকাতা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় বেদনাবোধ মনকে পীড়িত করেছে। ভাষা আন্দোলনের সম্পৃক্ততা আমার জীবনকে গৌরবান্বিত করেছে, আর  এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ঊনসত্তরের গণআন্দোলন, সত্তরের অসহযোগ আন্দোলন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ আমাদের পরিবার ও জীবনকে আলোড়িত করেছে। ইতিহাসের বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বিরাট পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে আমি যে কালটা পেরিয়ে এলাম সেই কালটাতেই। ইতিহাসের বর্ণনা দিয়ে নয়, কিছু কিছু ঘটনার স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে সেই কালটাকে ধরার প্রয়াস এই ‘পিছু ফিরে দেখ’।

সব মানুষের মত আমার জীবনেও ছেলেবেলা এবং যৌবনের কথা কথনোই পুরোনো হয়নি-সবুজ ঘন ছায়া নিবিড় অরণ্যের মাঝে এ যেন সূর্যের একঝলক আলো, পথের ধারে লতাগুল্মের মাঝে নব কিশলয়ের স্নিগ্ধতা। কর্মজীবনের প্রথম পাঁচটি বছর কেটেছে কারাগারের অধিবাসীদের ঘনিষ্ট সংস্পর্শে, প্রত্যক্ষ করেছি তাদের বিচিত্র বন্দিজীবন। কলকারখানায় জীবন কাটে যাদের সেই শিল্প শ্রমিকদের মাঝে গ্রামগঞ্জে অতিবাহিত করেছি পরবর্তী দশটি বছর। সংস্থার মেডিকেল বিভাগের সর্বোচ্চ পদে কাজ করেছি আরো পনেরোটি বছর। ডাক্তারের জীবনে অবসর নেই বলে এই বৃদ্ধ বয়সেও নিত্য  পরিচয় সমাজের নানা স্তর থেকে আসা রোগীদের সাথে, আর সেই সাথে পরিচয় তাদের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, আর্থিক ও সামাজিক সমস্যার সাথে। পেশাগত কাজের মাঝ দিয়ে কিছু স্বনামখ্যাত ব্যক্তিবর্গের সংস্পর্শে এসেছি- যাদের ছিটেফোঁটা উল্লেখ রয়েছে এ বইয়ের পাতায়, কিন্তু স্মৃতিচারণের অনেকটা স্থান জুড়ে রয়েছে কারাগার আর কারখানার বিচিত্র পরিবেশে দেখেছি সাধারণ মানুষের যে অসাধারণ চরিত্র তারই কথা। এদের কারো কারো ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য ও বৈশিষ্ট বিষ্ময়ের সৃষ্টি করে, আবার করুণার উদ্রেক করে এমন বেদনাদায়ক চরিত্রও এসেছে লেখার মধ্যে। বইয়ের অনেক পাতা ভরে আছে আমাদের পরিবার, স্বজন ও ব্ন্ধদের ছবি ও কথা দিয়ে। এদের হাসিকান্না ও আনন্দবেদনার কাহিনী ব্যক্তিগত সত্ত্বা হারিয়ে অপসৃয়মান এই শতাব্দীর মধ্যবিত্ত মানুষের সার্বজনীন রুপ নিয়েছে বলেই এ সংযোজন।

আমার এই জীবন আলেখ্য রচনায় কিছু তথ্য সংস্থাপিত হয়েছে যা হয়তো আত্মজীবনীর উপকরণ বলে নাও মনে হতে পারে। ডাক্তারী জীবনের অভিজ্ঞতা বিশাল ও বৈচিত্রময়। স্মৃতিচারণের ক্রমধারায় সেই অভিজ্ঞতার টুকরো টুকরো কথা এসে যায় এবং প্রাসঙ্গিক ভাবেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের কিছু তথ্য আর তত্ত্বকথা। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে সাধারণ মানুষের কৌতূহল কম নয় বলেই এগুলিকে ছেঁটে ফেলা হয়নি।

ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি। ভোরের আলোয় ঘুম ভাঙলে তার কতটুকুইবা মনে থাকে। আমরা স্বপ্নের কথা ভুলে যেতে পারি, কিন্তু জীবনটাতো স্বপ্ন নয়, বাস্তব সত্য। কত শত ঘটনার মধ্য দিয়ে পথ করে নেয় এ জীবন। পরিবেশ বা পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলী যেমন জীবনকে প্রভাবিত করে, তেমনি গড়ে তোলে জীবনস্মৃতিকে। মানুষের জীবন এতটাই, কিন্তু স্মৃতি তো একটা নয়- অসংখ্য। কোন কোন ঘটনার স্মৃতি কালান্তরে বিস্মৃতির অন্ধকারে হারিয়ে যায়। আবার সব মানুষেরই কিছু কিছু স্মৃতি থাকে যা সে ভুলতে পারেনা। জীবনের যে স্মৃতি ভুলতে পারিনি- হয়তো আনন্দের নয়তো বেদনার- তাই সমাবেশিত হয়েছে এ বইয়ের পাতায়।

আত্মকাহিনী লেখার জন্য প্রয়োজন যেমন তথ্যের, তেমনি তারিখের। রোজনামচা বা ডায়েরী তো কোনদিনই লিখিনি, তাই লেখা চলার সময় হোঁচট খেতে হয়েছে মাঝে মধ্যেই। এই সীমাবদ্ধতা নিয়েই এগিয়ে চলেছে লেখা। এই বইয়ের প্রারম্ভিক পর্বের শ্রুতি নির্ভর কিছু অংশ বাদে প্রায় সবটাই লিখতে হয়েছে স্মৃতি থেকে। স্মৃতি থেকে লেখা কষ্টসাধ্যই শুধু নয়, মাঝে মধ্যে বিভ্রান্তিকর। কারণ মন যত মনে রাখে ভোলে তার শতগুণ। প্রতিটি সমাজ ও কালের রয়েছে বিশেষ বিশেষ ভাবধারা ও মূল্যবোধ। এই মূল্যবোধের প্রতি সত্যনিষ্ঠ থেকে আত্মজৈবনিক ও সমাজজৈবনিক যথার্থ স্মৃতিচারণ বিপত্তিকর হতে পারে। ঘটনার মূল্যায়ন ও প্রাসঙ্গিক মতামত প্রদানের ক্ষেত্রে লেখক তার একান্ত নিজস্ব দৃষ্টিকোণ ও অনুভবকেই নিয়োজিত করেছে-একথাটা মনে রাখলে সংশয়ের অবকাশ থাকেনা।

 

সাইদ হায়দার




Last 10 Posts

Bangladesh
Posted by: Touhid Uz Zaman
  Read More
This is my first memoirs
Posted by:
  Read More
This my Second Memoirs
Posted by:
  Read More
My Memoiars
Posted by:
  Read More

More