My Online Diary

Online Journal, Travel Log and Memoirs

কাল নিরবধি


Anisuzzaman
(আনিসুজ্জামান)

(18 February 1937)

কাল নিরবধি

আনিসুজ্জামান

পূর্বাভাষ

আমার একটা পূর্ণাঙ্গ স্মৃতিকথা লেখার প্রথম প্রস্তাব আসে ডা.সারোয়ার আলীর কাছ থেকে যে-বীজ সে রোপণ করে, তাতে পানি ঢালে মতিউর রহমান, সাজ্জাদ শরিফ মফিদুল হক এমন প্ররোচনার ফলে ভোরের কাগজের সাহিত্য সাময়িকীতে ২১ নভেম্বর ১৯৯৭ থেকে ২৮ আগষ্ট ১৯৯৮ পর্যন্ত এবং প্রথম আলোর শুক্রবারের সাময়িকীতে ১৪ ডিসেম্বর ১৯৯৮ থেকে মার্চ ২০০২ পর্যন্ত প্রায় প্রতি পক্ষে কাল নিরবধি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ পায়

এই রচনার শুরু আমার পূর্বপুরুষের বৃত্তান্ত দিয়ে, সমাপ্তি মুক্তিযোদ্ধের সূচনায় আমার ডায়েরি লেখার অভ্যাস কখনো ছিল না, এখনো নেই স্মৃতি থেকে যা লিখেছি, অনেকে তার ভ্রান্তি নির্দেশ করেছেন; কিছু বিষয় বন্ধুদের কাছ থেকে যাচাই করে নিয়েছি; সন-তারিখের বেলায় অনেক সময়ে বইপত্রের শরণাপন্ন হয়েছি প্রথমে প্রবাসকালে বেবীকে যেসব চিঠি লিখেছিলাম, সেগুলো সে রেখে দেওয়ায় তখনকার ঘটনা বিকৃত করা সহজবোধ্য হয়েছে পারিবারিক ইতিহাস জেনেছি মূলত আমার বোন তৈয়বুন্নেসা আহসানের কাছ থেকে, আমার স্মৃতিপ্রণোদিত বর্ণনা এক-আধ জায়গায় সে সংশোধনও করে দেয় -বই দেখতে পেলে সে খুশি হতো, আর খুশি হতেন আমার মামাতো ভাই সৈয়দ কামরুজ্জামান

পত্রিকায় প্রকাশের সময়ে লেখাটি পড়ে অনেকে আমার স্মরণশক্তির প্রশংসা করেছেন; ‘ডায়েরি ছাড়া এতো কথা কী করে মনে রাখলেন!’ আমি স্মিত হেসে আনন্দ প্রকাশ করেছি কেউ কেউ আবার বলেছেন: ‘তুমি বেমালুম সব ভুলে বসে আছো, আবার লিখতে বসেছো স্মৃতিকথা! আমাদের কাছ থেকে জেনে না নিয়ে বই ছাপিও না কিন্তু!’ কাষ্ঠহাসি হেসে তাঁদের হুকুম তামিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তখনো জেনেছি, এতজনের কাছ থেকে এত কথা যাচাই করা সম্ভবপর হবে না যাচাই করতে গিয়ে খুব বেশি তথ্য পাইনি; আবার অনেক সময়ে যা জেনেছি, আমার স্মৃতির সঙ্গে তার মিল হয় না।

আমার ভ্রান্তি নিরসন করে, বিস্মৃতকে গোচরে এনে, কিংবা বিতর্কের অবতারণা করে আমাকে অনুগৃহীত করেছেন আবদুল গাফফার চৌধুরী, আবদুল মান্নান সৈয়দ, আবু মোহাম্মদ ফেরদৌস, আবুল মাল আবদুল মহিত, আলী আকসাদ, এ জেড এম আবদুল আলী, কামরুজ্জামান, নুরুল হক, প্রাণেশ সমাদ্দার, ফখরুজ্জামান চৌধুরী, ভূঁইয়া ইকবাল, মফিদুল হক, মহসিন শস্ত্রপাণি, মামুন সিদ্দিকী, মাহবুবউল্লাহ, মিন্নাত আলী, মীর মোজাম্মেল হোসেন, মোকাদ্দেসুর রহমান, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, শামসুল আনোয়ার, শাহেদ কামাল, সৈয়দ আবুল মকসুদ, হাফিজউদ্দীন খান ও হাবিব রহমান। প্রচ্ছদ এঁকে দিয়েছেন কাইয়ুম চৌধুরী, মানচিত্র সরবরাহ করেছেন গ্রাফোসম্যান। আলোকচিত্রীদের মধ্যে জহিরুল হক, নাসির আলী মামুন, মুস্তাফা জামান আব্বাসী, রফিকুল ইসলাম ও হুমায়ুন আবদুল হাই ছাড়া অন্যেরা অজ্ঞাতই রয়ে গেলেন। এছাড়া নানাভাবে সহায়তা করেছেন আবুল আহসান চৌধুরী, আবুল খায়ের, গাজী শাহাবুদ্দিন আহমদ, নজরুল ইসলাম, বেনজির আহমেদ, রণবীর সমাদ্দার ও লুভা নাহিদ চৌধুরী। যাঁদের নাম করলাম এবং যাঁরা নামহীন রয়ে গেলেন, তাঁদের সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। গ্রন্থাকারে প্রকাশের সময়ে পত্রিকায় মুদ্রিত রুপের কিছু অদলবদল করেছি এবং দুটি ক্ষেত্রে অধ্যায়ের শিরোনামও পরিবর্তিত হয়েছে।

পাঠকের কাছে যদি আমার স্মৃতিকথার কোনো প্রাসঙ্গিকতা থাকে, তা এই জন্যে যে, আমি প্রচুর তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী এবং বহু বিশিষ্ট ব্যক্তির সাহচর্যধন্য। যে-পরিবেশ-পরিপ্রেক্ষিতে আমি ‘হয়ে উঠেছি, সে-সম্পর্কে জানাবার সঙ্গে সঙ্গে তাই আমি অন্য অনেকের এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নানান ঘটনার কথা বলতে চেয়েছি। কোনো কোনো ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় প্রত্যক্ষদর্শী না হয়েও তার বর্ণনা দিয়েছি।

 

এ-ধরনের লেখায় অকপটে বলার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার রেওয়াজ আছে। যেসব ক্ষেত্রে অন্যের গোপনীয়তা ভঙ্গের অধিকার আমি অর্জন করিনি, সেসব ক্ষেত্রে কিছু কথা অনুক্ত থেকে গেছে। স্মৃতিও হয়তো প্রতারণা করেছে। এই শর্তসাপেক্ষে দাবি করতে পারি, সদা সত্য কথা বলিয়াছি।

নিজের কথা বলার দুর্বার আকাঙ্ক্ষা সকলেরই থাকে। আমি তার ব্যতিক্রম নই। তবে সে-আকাঙ্ক্ষা অবদমন করা যেতো যদি না বাইরে থেকে অন্যরকম উসকানি পেতাম। অনেক পাঠক হয়তো বলবেন, আরো কিছু অকথিত থাকলেও ক্ষতি ছিল না। বেশি-না-লেখা সম্পর্কে শরৎচন্দ্রের সতর্কবাণী যে আমার অজানা নয়, তার প্রমাণ দাখিল করেছি। মানুষ সবসময়ে অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেয় না এবং সদুপদেশ মানতে চাইলেও অনেক ক্ষেত্রে তা পেরে ওঠে না।

 আনিসুজ্জামান




Last 10 Posts

Bangladesh
Posted by: Touhid Uz Zaman
  Read More
This is my first memoirs
Posted by:
  Read More
This my Second Memoirs
Posted by:
  Read More
My Memoiars
Posted by:
  Read More

More